ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী ডিঙিয়ে লোকালয়ে রোহিঙ্গা শ্রমিক!

রাতের আঁধারে পাহাড় কাটতে গিয়ে প্রাণ গেলো ৩ রোহিঙ্গা যুবকের

আবদুল্লাহ আল আজিজ, কক্সবাজার জার্নাল •


কক্সবাজারের উখিয়ায় সরকারি সংরক্ষিত পাহাড় অবৈধভাবে কাটতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে তিন রোহিঙ্গা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর ৪টার দিকে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের মুহুরীপাড়ায় আবদুল মান্নান প্রকাশ টুনা মিস্ত্রি ও নেছার আহমদের ভোগদখলীয় সরকারি জমিতে পাহাড় কাটার সময় এ দূর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম চালায় উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম। দীর্ঘ চেষ্টার পর তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।

নিহতরা হচ্ছে উখিয়ার কুতুপালং ১/ইস্ট ক্যাম্পের বি/১ ব্লকের মৃত মোঃ ওয়ারেসের পুত্র সৈয়দ আকবর (২০), ডব্লিউ /১ ক্যাম্পের সি/১৪ ব্লকের মৃত আবদুল মতলবের পুত্র জাহিদ হোসেন (২৪) ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পের এইচ/১০৭ নম্বর ব্লকের সুলতান আহাম্মদের পুত্র নুর কবির (২৭)।

এদিকে, পাহাড় কাটার সময় তিনজন নিহতের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউএনও, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, মুহুরীপাড়া এলাকার নেছার আহমদের বাড়ির পাহাড় কেটে সমতল করার কাজ করছিল একদল রোহিঙ্গা শ্রমিক। মাটি কাটার এক পর্যায়ে উপরে থাকা নেছার আহমেদের বাড়ির আঙ্গিনা অংশের পাহাড় ধসে পড়লে কর্মরত তিন শ্রমিক মাটিতে চাপা পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন রাত হলেই অনেক রোহিঙ্গার আগমন ঘটে। আবদুল মান্নান প্রকাশ টনা ও নেছার আহমদ গভীর রাত ও ভোরে রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে বিশাল পাহাড় কেটে শীলের ছড়া এলাকার মৃত আবুল বলির ছেলে ভুলু সওদাগর ও নুর মোহাম্মদ বলি এবং মাছকারিয়া এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে নুরুল ইসলাম ডাম্পার যোগে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এসব কাজে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছে ভিলেজার ও হেডম্যান। ইতিপূর্বে এই জায়গায় হতাহতের ঘটনা ঘটে ছিল।সেটি ধামাচাপা দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও এপিবিএন পুলিশ থাকার পরেও লোকালয়ে চলে আসছে রোহিঙ্গারা। যারা এসব রোহিঙ্গাদের কম মজুরিতে কাজ করিয়ে নেওয়ার সাথে জড়িত ও পাহাড় এবং মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানায় তারা।

ঘটনাস্থলে কান্নারত ছৈয়দ আকবরের মা রাবেয়া বসরী জানান, গতকাল কাজের সন্ধানে নিজের ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভেল ডিফেন্স-এর স্টেশন ইনচার্জ এমদাদুল হক জানান, দুইজনের মরদেহ সকাল ৯টার দিকে উদ্ধার করা হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ছৈয়দ আকবরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ঘটনার ব্যাপারে উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মুহুরী পাড়া এলাকায় পাহাড় কাটার সময় মাটি চাপা পড়ে তিনজন নিহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, সরকারি পাহাড় নিধনের অভিযোগ ছিলো আবদুল মান্নান প্রকাশ টনা মিস্ত্রি ও নেছার আহমেদসহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। তাদের ৫ জনের নামে বিগত দিনেও মামলা দায়ের করেছিলো বনবিভাগ। যার মামলা নং ২৫/উখি অব ২০২২-২৩।

আর পাহাড় কর্তনের দায়ে মামলা দায়ের করা ৫ জন হলেন, মুহুরী পাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান প্রকাশ টনা মিস্ত্রি ও নেছার আহমদ, মাছকারিয়া এলাকার নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরু মাঝি, শীলের ছড়া এলাকার আবদুল জব্বার প্রকাশ ভুলু এবং নুর মোহাম্মদ বলী। এরপরেও ক্ষান্ত হয়নি তারা। রাতের আঁধারে আবারও তাদের অপকর্ম করতে গিয়ে এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে যায়।

এ ঘটনায় জড়িত ৫ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নং ২৬/উখি অব ২০২২-২৩।